বাংলাদেশের আবাসন শিল্প : সংকট ও উত্তরণের উপায়
-আনিসুর রহমান এরশাদ
প্রত্যেকের কাছেই তার নিজ বাড়ি যেমন একটা বিশ্রামের স্থল
ঠিক তেমনি সেটা তার একটা প্রাসাদ, একটা দূর্গ
আর সেই সাথে ক্ষয়-ক্ষতি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা।
-স্যার এডওয়ার্ড কোক
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ খাত হলো আবাসন শিল্প। আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে
বর্তমানে দেশে দুই থেকে আড়াইশ কোম্পানী জড়িত। বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা বিপুল
সম্ভাবনার আবাসন শিল্প খাত জাতীয় অর্থনীতিতে ২১ শতাংশ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের শিল্পখাতের ১৫ শতাংশ আয় হয় আবাসন খাত থেকে। বাংলাদেশের আবাসন
শিল্পে ২০ লাখ মানুষ কর্মরত। প্রতিবছর এখাত থেকে ১৪ হাজার কোটি ডলার
সমপরিমাণ অর্থ আয় হয়।
বাংলাদেশে আবাসন শিল্প কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবছর ১০ শতাংশ
হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। অথচ এই হারে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠছেনা। রিহ্যাবের
হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর কমপক্ষে ১ লাখ ফ্লাট তৈরি হলে বর্ধিত জনসংখ্যার
আবাসন সমস্যার সমাধান হতো। বাসস্থান সংকটে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর আবাসন খাত থেকে রাজস্ব হিসেবে
১৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এখাতের নির্মাণ
সামগ্রী আমদানি করে সরকার রাজস্ব পায় বছরে ১৪০০ কোটি টাকা। সিমেন্ট ও রড
শিল্প থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় আরও ১৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে আবাসন খাতে
৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৪ হাজার কোটি
টাকারও বেশি যা দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ ।
বিএলডিএ ও রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আবাসন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন শিল্পখাতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৭৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা। এসব খাতের ওপর
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এই বিপুল
জনসংখ্যার অন্নসংস্থান হচ্ছে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকেই।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানীর
এক কোটি ২৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৩ শতাংশ ভাড়া বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সাল থেকে গত
২০ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়ে ৩২৫ শতাংশ। সাধারণ মানুষের আয়ের ৬০
শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় বাড়িভাড়ার পেছনে।
নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন সব মানুষেরই থাকে। অন্য দেশের মতো আমাদের দেশে
সরকার সব মানুষের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না। দেশের মানুষের স্বার্থেই
আবাসন শিল্পকে বিকশিত হতে দিতে হবে।
আবাসন শিল্পে নানাবিধ সংকট:
সরকার দেশে নতুন করে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
এবং বন্ধ করে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই শিল্পকে। বিদ্যুৎসহ সেবা সংযোগ
মিলছেনা। বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়াটা বড় সমস্যা। পানি ও গ্যাস সংযোগ ঠিকমত
পাওয়া যায়না।
ফ্লাট রেজিস্ট্রেশনে প্রতি বর্গফুটে ফি বাড়ানো হয়েছে আট গুণ ২৫০ টাকা
থেকে ২০০০ টাকা। একটি ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন করতেই যদি ১০-১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়
তাহলে মানুষ ফ্লাট কেনার টাকা পাবে কোথায়? উৎসে আয়কর বৃদ্ধি করায় বর্তমানে
রেজিস্ট্রেশন খরচ দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ। অথচ ভারতে মাত্র ৬ শতাংশ।
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকায় এই ফি এক থেকে সর্বোচ্চ চার
শতাংশ।
এ খাত ভয়াবহ হুমকির মুখে। কেননা এখনও চূড়ান্ত হয়নি জলাধার আইন।
ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব। রাজধানী উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জলাশয় ভরাট করে প্লট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
আদালতের এক নির্দেশনার সূত্র ধরে আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড ভাঙ্গা
থেকে রেহাই পায়নি ৪৫ বছরের পুরনো আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ণ হাউজিং।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অব্যাহত গণ আন্দোলন প্রবাসী বাংলাদেশীদের
পাঠানো অর্থের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে
এবং একই সাথে তা দেশটির আবাসন শিল্পের ক্ষেত্রে মারাত্বক প্রভাব ফেলছে।
আবাসন শিল্পের ভবিষ্যত যদি খারাপ হয় তবে বেকার হয়ে পড়বে বিশাল জনশক্তি।
এছাড়া নির্মিত ফ্লাটগুলোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংকে বর্তমানে গ্রাহকের ঋণের
পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ফ্লাটে উঠতে না পারার কারণে তাদেঁর
একদিকে বাড়ি ভাড়া গুণতে হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ফলে অনেকে গ্রাহকের অবস্থা শোচনীয়।
সমস্যার সমাধানে করণীয়:
নব নির্মিত বাসস্থানে সেবা সংযোগ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আবাসন শিল্পের বড়
প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশে শিল্প হিসেবে আবাসন শিল্পকে বিকশিত করতে হলে
প্রতিবন্ধকতা অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাস্তবসম্মতভাবে ড্যাপ বাস্তবায়ন ও জলাধার আইন চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে
আবাসন শিল্পের বিকাশের পথ রুদ্ধ। দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে
বাঁচাতে হলে এই শিল্পের প্রতি সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থাকাটা অত্যন্ত
জরুরী।
আবাসন খাতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ ব্যবহার হয়।
তাই আবাসন খাতে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ রাখাই বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান ভাবাটা
বোকামি। প্রয়োজনীয় এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি গৃহনির্মাণ ঋণ
সুবিধা, কর অবকাশ সুবিধা প্রভৃতি নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যবিত্ত এবং প্রবাসী
ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে অনলাইন সার্ভিস রাখাটাও জরুরী। কেননা আবাসন
শিল্পের বেশিরভাগ ক্রেতাই প্রবাসী।
বাংলাদেশের আবাসন শিল্প ও বাস্তবতা: একটি বিশ্লেষণ
আবাসন শিল্পের ৯০ শতাংশের বেশি বর্ধিষ্ণু শহর ঢাকা কেন্দ্রিক। জেলা
শহরগুলোতেও আবাসন শিল্প বিকাশ লাভ করেছে। আবাসন শিল্প মালিকদের দাবি সব
মিলিয়ে ১৭৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এই খাতে।
বিশ্বের অনেক দেশে ভাড়ার টাকায় ফ্যাটের মালিক হওয়ার সুযোগ করে দেয়
সরকার। যেমন মালয়েশিয়া, অথচ বাংলাদেশে সারা জীবনেও সাধারণ চাকরিজীবীদের
মাথা গোঁজার ঠাঁই করার সুযোগ হয়না।
ঢাকা মহানগরীর ভুমি প্রকল্পের সাধারণত নিম্নরুপ:
ভূমি ব্যবহারের ধরণ শতকরা হার
আবাসিক এলাকা ৩৫
প্রশাসনিক এলাকা ১৭
বাণিজ্যিক এলাকা ৩০
শিল্প এলাকা ০৫
বিনোদন এলাকা ০৫
পরিবহন এলাকা ০৩
অব্যবহৃত জলাশয় ০২
অন্যান্য ০৩
মোট ১০০
উল্লেখিত পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে, আবাসিক খাত এক তৃতীয়াংশ জায়গা ব্যবহার
করে। যার অধিকাংশই অপরিকল্পিত ও যেনতেনভাবে। পরিকল্পিত নগরায়ন সম্ভব হলে
২০% এর মধ্যে নিশ্চিত করা সম্ভবপর ছিল। পৃথিবীর উন্নত নগরী হংকং, টোকিও
প্রভৃতিতে জনসংখ্যায় ঘনত্ব আমাদের ঢাকা শহরের তুলনায় বেশী এবং ভূমিও তারা
কম ব্যবহার করতেছে।
রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি এম তৌফিক আজ বলেছেন, বিদেশ থেকে প্রবাসীরা যে
অর্থ প্রেরণ করেন তার বেশির ভাগই বাড়ি ও জমিকেনায় ব্যয় হয়। রিহ্যাবের
হিসাবে প্রতিবছর অন্তত একলাখ ফ্যাট তৈরি করা হলে বর্ধিত মানুষের বাসস্থানের
চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পরিশেষে এটি নি:সন্দেহে বলা যায় যে, বাংলাদেশের আবাসন শিল্পের সংকট
নিরসনে সরকারকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সমস্যা থেকে
উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের যত্নশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
1 Comments
Remaining the Capital Metropolis, Dhaka is one of the busiest metropolitan areas of Bangladesh. As outlined by stats, Dhaka’s total population is a lot more than two Crore in 2021. Much more than 70% of people have come from outside of Dhaka to generate their livings. All those important numbers of people decide to rent properties to reside in Dhaka. Would you belong to those individuals? In search of Home Rent in Dhaka? This information can help you to make a greater selection for renting a home in Dhaka. Besides, you will know about ways to get dwelling hire in Dhaka. With no more delay, let’s make a dive ahead.
ReplyDeleteVery first thing very first, You must settle on a specific location where by you desire to to stay in Dhaka. Nobody likes a loud spot. Before you decide to hire a flat in Dhaka, you'll want to Check out the spot just how much noisy can it be? Then, you have to know about the availability of Fuel and Drinking water in that area. Are you aware of that some places in Dhaka don’t have correct Fuel and Water availability? Before transferring on, you ought to inspect the Fuel and Drinking water availability. Besides, it is crucial to get marketplaces nearby. If not, it might Provide you an uncomfortable experience quicker or afterwards.Safety is an additional big situation. Inspect the safety program right before renting a flat in Dhaka metropolis. It will be a bonus If your property is surveillance with CCTV cameras. Previous although not the the very least, price range is a vital factor to contemplate after you are trying to find lease in Dhaka. Talk with the assets owner in regards to the Progress You should spend. Also, request the proprietor about if any more fees you have to bear. If every little thing goes wonderful, you could hire flat in Dhaka. Now, I would want to advise you ways to get Home Hire in Dhaka.