আবাসন শিল্পে স্থবিরতা:ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ৪২ শতাংশ নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের আবাসন শিল্পে স্থবিরতা চলছে। গত কয়েক বছরে সরকারের গৃহীত নানা
সিদ্ধান্ত চরম সংকটে ফেলেছে গুরুত্বপূর্ণর্ এ শিল্প খাতকে। গত পাঁচ বছরে
জমির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, রেজিস্ট্রেশন
খরচ বৃদ্ধি, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে
অন্তত ৩০ শতাংশ। ফলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে স্বল্প-মধ্য আয়ের ক্রেতাদের
সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এতে আবাসন খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি
নেমে গেছে প্রায় ৪২ শতাংশ।
সম্প্রতি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) এক সমীক্ষায় এমন ভয়ংকর চিত্র পাওয়া গেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত এক বছরে গৃহ ও ভবনের বিক্রির হার ৪২ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে কাজের গতি অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠান মালিক। তবে আবাসন শিল্পের এ পরিণতি হঠাৎ করে হয়নি। ২০০৭ সাল থেকে ধীরে ধীরে এ ব্যবসায় এমন অবনতি দেখা দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের বিধিনিষেধ এবং পরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধসহ সরকারি নানা সিদ্ধান্তের কারণে অব্যাহতভাবে এ ব্যবসার পরিধি সংকুচিত হতে থাকে। এর পর থেকে গৃহ ও ভবনের বিক্রি ক্রমাগত কমতে শুরু করে।
রিহ্যাবের সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আবাসন খাতে প্রতিষ্ঠানভেদে বিক্রি কমেছে ২৫ থেকে ৭০ শতাংশ। আবাসন খাতের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান শেলটেকও এ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ বছরই প্রথমবারের মতো শেলটেকের বিক্রি ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক এম সেরাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান ১৯৮৮ সাল থেকে বেশ সাফল্যের সঙ্গে আবাসন ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো এমন সংকটে কখনো পড়েনি। তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শেলটেকের বিক্রি এখনো বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম এ শিল্পের গতি রোধ করা হয়। তখন অনেক ব্যবসায়ী এ শিল্পে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বর্তমান সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এ শিল্পের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করেছে বলে তাঁরা মনে করেন। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯/বি ধারা উঠিয়ে দেওয়া, এ খাতের নির্ধারিত ব্যাংক ঋণ প্রদান বন্ধ করা, জমির দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানো, নতুন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা, নির্মাণসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারাসহ নানা কারণে এ শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
রিহ্যাবের এক হাজার ৮১টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং রিহ্যাববহির্ভূত দুই হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে আবাসন খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করলে এ খাতে নেমে আসে চরম স্থবিরতা। নতুন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে ঢাকায় ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে বলে জানা গেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, আবাসন খাতের এ পরিণতিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ঢাকাবাসী। এর ফলে ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। বাড়ি ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ। এ সমস্যা কাটিয়ে আবাসন শিল্পকে আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুনরায় ৯ শতাংশ সুদে গৃহঋণ চালু করা এবং আবাসন ঋণের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা। এ ছাড়া আবাসন শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্পে ভর্তুকি দেওয়া ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ জানিয়েছে এ সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সভাপতি নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আবাসন ব্যবসায় ধস নামলে গোটা অর্থনীতিতে ধস নামে। সারা বিশ্বেই এটা স্বীকৃত। তাই এ ধস থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।' তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যেভাবে এ ব্যবসা চলছে তাতে ভবিষ্যতে অবস্থা আরো খারাপ হবে। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারকে নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু এখন আবাসন খাতের জন্য একটি সংকটময় মুহূর্ত সেহেতু এ শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এ জন্য ১৯/বি ধারা পুনরায় বহাল করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে নসরুল হামিদ বলেন, শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। যাদের অনেকেই স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে ফ্ল্যাট ক্রয়ে আগ্রহী হতো। তাদের কথা চিন্তা করে পুনরায় ৯ শতাংশ হার সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। সঠিকভাবে ঋণ বিতরণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণগ্রহীতা ও রিয়েল এস্টেট কম্পনির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি ব্যবস্থাপনা চালুরও পরামর্শ দেন তিনি। Source: http://www.kalerkantho.com
সম্প্রতি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) এক সমীক্ষায় এমন ভয়ংকর চিত্র পাওয়া গেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত এক বছরে গৃহ ও ভবনের বিক্রির হার ৪২ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে কাজের গতি অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠান মালিক। তবে আবাসন শিল্পের এ পরিণতি হঠাৎ করে হয়নি। ২০০৭ সাল থেকে ধীরে ধীরে এ ব্যবসায় এমন অবনতি দেখা দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের বিধিনিষেধ এবং পরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধসহ সরকারি নানা সিদ্ধান্তের কারণে অব্যাহতভাবে এ ব্যবসার পরিধি সংকুচিত হতে থাকে। এর পর থেকে গৃহ ও ভবনের বিক্রি ক্রমাগত কমতে শুরু করে।
রিহ্যাবের সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আবাসন খাতে প্রতিষ্ঠানভেদে বিক্রি কমেছে ২৫ থেকে ৭০ শতাংশ। আবাসন খাতের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান শেলটেকও এ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ বছরই প্রথমবারের মতো শেলটেকের বিক্রি ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক এম সেরাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান ১৯৮৮ সাল থেকে বেশ সাফল্যের সঙ্গে আবাসন ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো এমন সংকটে কখনো পড়েনি। তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শেলটেকের বিক্রি এখনো বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম এ শিল্পের গতি রোধ করা হয়। তখন অনেক ব্যবসায়ী এ শিল্পে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বর্তমান সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এ শিল্পের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করেছে বলে তাঁরা মনে করেন। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯/বি ধারা উঠিয়ে দেওয়া, এ খাতের নির্ধারিত ব্যাংক ঋণ প্রদান বন্ধ করা, জমির দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানো, নতুন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা, নির্মাণসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারাসহ নানা কারণে এ শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
রিহ্যাবের এক হাজার ৮১টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং রিহ্যাববহির্ভূত দুই হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে আবাসন খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করলে এ খাতে নেমে আসে চরম স্থবিরতা। নতুন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে ঢাকায় ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে বলে জানা গেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, আবাসন খাতের এ পরিণতিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ঢাকাবাসী। এর ফলে ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। বাড়ি ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ। এ সমস্যা কাটিয়ে আবাসন শিল্পকে আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুনরায় ৯ শতাংশ সুদে গৃহঋণ চালু করা এবং আবাসন ঋণের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা। এ ছাড়া আবাসন শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্পে ভর্তুকি দেওয়া ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ জানিয়েছে এ সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সভাপতি নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আবাসন ব্যবসায় ধস নামলে গোটা অর্থনীতিতে ধস নামে। সারা বিশ্বেই এটা স্বীকৃত। তাই এ ধস থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।' তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যেভাবে এ ব্যবসা চলছে তাতে ভবিষ্যতে অবস্থা আরো খারাপ হবে। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারকে নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু এখন আবাসন খাতের জন্য একটি সংকটময় মুহূর্ত সেহেতু এ শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এ জন্য ১৯/বি ধারা পুনরায় বহাল করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে নসরুল হামিদ বলেন, শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। যাদের অনেকেই স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে ফ্ল্যাট ক্রয়ে আগ্রহী হতো। তাদের কথা চিন্তা করে পুনরায় ৯ শতাংশ হার সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। সঠিকভাবে ঋণ বিতরণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণগ্রহীতা ও রিয়েল এস্টেট কম্পনির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি ব্যবস্থাপনা চালুরও পরামর্শ দেন তিনি। Source: http://www.kalerkantho.com
0 Comments