Ad Code

Housing all: Affordable quality housing is a key element of a strong and secure life

আবাসন শিল্পে সমস্যা ও সম্ভাবনা

মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন : মহাসঙ্কটে পড়েছে দেশের সম্ভাবনাময় আবাসন খাত। বিদেশি সাহায্যপুষ্ট কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিকল্পিতভাবে দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত আবাসন শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ খাতেরই বিনিয়োগকারীরা এখন এসব কথা রাখঢাকের বাইরে ফলাও করে বলতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের  মন্তব্য, নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব এনজিও আইনি জটিলতায় ফেলছে আবাসন খাতকে। ভুল তথ্য দিয়ে এরই মধ্যে তারা আবাসন প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালিয়েছে। তাদের এই চক্রান্তে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। একই সঙ্গে আবাসিক ও ভূমি উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হলে কমপক্ষে তিন কোটি মানুষ সম্পর্ণ বেকার ও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এসেছে, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আবাসন খাত ধ্বংসের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে।
জানা গেছে, আবাসন খাতে সঙ্কট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অভাবে পাঁচ হাজার রেডি ফ্ল্যাট ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। এতে ফ্ল্যাট ও জমির মালিক এবং ডেভেলপাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু, শুধু ফ্ল্যাটেই ঝুঁকিতে পড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
মূলত সরকার এই মুহূর্তে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবাসন খাত ধ্বংসের মুখে পড়বে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের হিসাব অনুযায়ী, আবাসন শিল্পে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসী বিনিয়োগ। মধ্য আয়ের মানুষের সঞ্চয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকাও গচ্ছিত আছে এ খাতে। এ খাতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৭০টি উপখাত। এগুলোতে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার শিল্প। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পে কাজ করছে কয়েক কোটি মানুষ।
রাজউকের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আবাসন উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রাজউক ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিলেও বাকি ১৭৪টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পগুলোতে এরই মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
রিহ্যাবের হিসাব মতে, আবাসন শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে শতকরা ২১ ভাগ। এ খাতে বিনিয়োগ করা টাকার ৩০ শতাংশ এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ থেকে। যার পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
আবাসন খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন ৫০ লাখ শ্রমিক। যার সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই কোটি মানুষের ভরন পোষণের প্রশ্ন। এছাড়াও হাউজিং এবং ভূমি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরো শতাধিক শিল্প উপখাত। এসব খাতের বিনিয়োগের পরিমাণও কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ সকল শিল্প উপখাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে আরো দেড় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ সরাসরি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেসব বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)কে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে তারা ঢাকা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এক অরাজক পরিসি’তি তৈরি করলেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও তা সফল হয়নি।
এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি ড্যাপ নিয়ে কাজ করছে। তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ড্যাপ কার্যকর হচ্ছে না বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এ অবস্থায় ওইসব বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিরোধিতায় নেমেছে। এনজিও’র এ চক্রান্ত সফল হলে দেশের আবাসন উন্নয়ন এবং ভূমি উন্নয়ন খাতে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।
ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৬টি আবাসন প্রকল্প ও স্থাপনা এবং দুই হাজার ৭২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ড্যাপের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ (নন-কনফার্মিং) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কমিটি প্রকল্পগুলো অনুমোদন না দিতে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে আবাসন প্রকল্প রয়েছে মোট ১৬টি। যার ছয়টিই সরকারি প্রতিষ্ঠান।
এ নিয়ে সরকারের কাছে ড্যাপ নিয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা, তাতে বলা হয়েছে, ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে- কয়েকটি এনজিও তাদের প্রচারণায় সেনাবাহিনীকে ক্ষেপিয়ে তুলতে আর্মি হাউজিং প্রকল্প বন্ধ ও আবাসন খাতে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের ক্ষেপিয়ে তোলারও চেষ্টা করছে তারা।
অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যাও আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। গত এক বছর ধরে এ খাতে নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় এ সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে।
রিহ্যাব বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার কারণে আনুমানিক পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে পারছে না বলে প্রচার করছে। কিন’ প্রকৃতপক্ষে এ ফ্ল্যাটের সংখ্যা অনেক বেশিই হবে। কারণ রিহ্যাবের সদস্য সংখ্যা ইতোমধ্যেই নয়শ ছাড়িয়েছে। তাহলে প্রতিটি কোম্পানি যদি গড়ে ১০টি করে ফ্ল্যাটও হস্তান্তর করতে না পারে তাহলে এ সংখ্যা হবে প্রায় ১০ হাজার। ফ্ল্যাটপ্রতি গড় মূল্য যদি ৭৫ লাখ টাকা হয় তাহলে এর মোট মূল্য দাঁড়াবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। তার অর্ধেক যদি ব্যাংক লোন নিয়ে থাকে তাহলে এর জন্য শত শত কোটি টাকা বছরে সুদ গুনতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে সঙ্কটের মুখে পড়েছে আবাসন শিল্প। ঝুঁকির মধ্যে আছে এ শিল্পের ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
প্রসঙ্গত বর্তমান মহাজোট সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন’ গত দু’বছরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোডশেডিংয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা মানুষকে হতাশ করেছে।
আমরা আশা করবো, জনগণের দুর্ভোগ প্রশমনে এবং সব ধরনের শিল্প, কৃষি, আবাসনসহ সবকিছুকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তথা গোটা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার তাগিদে সরকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বিশেষত প্রায় লাখ কোটি টাকার আবাসন শিল্পকে সরকার সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করে এ শিল্পের সম্ভাবনাময় দিককে প্রসারিত করবে।
Source: http://www.kholakagoj.com
 

Post a Comment

0 Comments