নতুন দুশ্চিন্তা আবাসন ব্যবসায়ীরা
নির্মান অন্যান্য কাঁচামালের দামের পাশাপাশি সিমেন্টের দামও বাড়ছে কোনো ধরণের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। আর এতে আবাসন ব্যবসায়ীদের মাথায় নতুন করে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
প্রতিদিনই বাড়ছে গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম। কাঁচামাল ও জ্বালানি সংকটে এই
দাম বাড়ছে বলে মনে করেন সংশিষ্টরা। বাজারে ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রড বিক্রি
হয়েছে ৭০ হাজার ৫০০ টাকায়। গত মাসে এ রডই বিক্রি হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। এক
মাসের ব্যবধানে সাড়ে ৮ হাজার টাকা বেড়েছে। কিছু দিন আগেও এ রডের দাম ছিল ৫৫
থেকে ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে।
বাড়ছে সিমেন্টের দামও। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। এক
সপ্তাহ আগে যেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৩৯০
টাকা, সেই সিমেন্ট কাল বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকায়। এক মাস আগে প্রতি ব্যাগ
সিমেন্টের দাম ছিল ৩৪০ থেকে ৩৫৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসেই দাম বাড়ছে রড ও
সিমেন্টের।
ইটের দামে নানা রকম বিভাজন আছে। সনাতনি পদ্ধতি ও স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি
হয় ইট। এই দুপ্রকার ইটের দামে রয়েছে বিস্তর তারতম্য। সামগ্রিকভাবে সব ইটের
দামই বাড়ছে।
গত সপ্তাহে ভালোমানের প্রতি হাজার ইটের দাম ছিল সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭
হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে সেই ইটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার টাকা। আবার
ভালোমানের মধ্যে একটু খারাপমানের ইট মিশিয়ে পাঁজা (ঢিপ) করে রাখা প্রতি
হাজার ইটের দাম সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এই মানের ইট গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬
হাজার টাকা। আবার খারাপমানের ইট বিক্রি হচ্ছে দর কষাকষি করে। তবে আগের চেয়ে
বেশি দামে।
বাংলাদেশ স্টিলসের প্রোপ্রাইটর আবুল হাসান সংবাদ২৪.নেটকে বলেছেন, দাম যে
হারে বাড়ছে তাতে তাদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি জানান,
স্টিল মিলগুলো ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারী পর্যায়ে তাদেরও দাম
বাড়াতে হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ের ক্রেতারা এতে ক্ষুব্ধ হলেও তাদের কিছুই করার
থাকছে না।
দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যাখা দিয়েছেন বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস
অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেছেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে
যাওয়ার কারণে তৈরি রডের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে
রাতে মিল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এছাড়া দিনে মিল চললেও তীব্র গ্যাস সংকটে
পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে না। এ অবস্থায় দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো গতান্তর নেই।
কাঁচামালের দাম ও জ্বালানি সংকটের সমাধান হলে রডের দাম অনেক কমবে।
ব্রিক ওয়ার্কসের ব্যবস্থাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া সংবাদ২৪.নেট জানালেন
ভিন্ন সমস্যার কথা। তিনি বললেন, নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও ফাট বিক্রি করতে
হচ্ছে কম মূল্যে। তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রির মূল্য ধরে হিসাব করলে ফাটের
প্রতি বর্গফুট জায়গার দাম পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অথচ ধানম-ির মতো এলাকায়
সেই প্রতি বর্গফুট জায়গার দাম বিক্রির জন্য ধার্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮ হাজার
টাকা। এরপরেও ক্রেতা মিলছে না। ব্যবসায় একপ্রকার ধস নেমে এসেছে। অভিজাত
এলাকার বাইরে নির্মিত ফাটের প্রতি বর্গফুটের দাম কিছুটা কম। কোথাও কোথাও ৪
হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। কিন্তু ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবাসন
নির্মাণ খরচ এত বেড়েছে যে সাধারণ মানুষের ক্রয় মতার বাইরে চলে যাচ্ছে একটু
মাথা গোঁজার ঠাঁই। ফাটের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে নিরন্তর চেষ্টা
করে যাচ্ছেন আবাসন শিল্প মালিকরা।
নির্মাণ সামগ্রির দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাসন শিল্পে ভয়াবহ অস্থির অবস্থা
বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন রিহ্যাব সভাপতি নসরুল
হামিদ বিপু। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেছেন, চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন আবাসন
শিল্পমালিকরা। নির্মাণ খরচ এত বেড়েছে যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পে
সরকারের কোনো সহযোগিতা মিলছে না। করের ওপর কর আরোপ হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই,
গ্যাস নেই। এর ওপর আবার সোলার বিদ্যুৎ চালনার বাধ্যবাধকতা। কেউই সোলার
সিস্টেম ব্যবহারে আগ্রহী নয়। নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আবাসন শিল্পের
সম্প্রসারণ।
0 Comments