অল্প কয়েক বছর সময় কী পার্থক্যই না গড়ে দিতে পারে: ২০১০ সালে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এক সোনালি সময় পার করে যেখানে ঘুরে দাঁড়ানো, সেখানে বাড়ি বিক্রয় এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার বাজারের অবদান অনস্বীকার্য। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে সকল সম্পদের কারনে আবাসন খাত বিকাশ লাভ করে-বিশেষ করে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ,যা নির্জন জায়গাকে মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলে- ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়, যার ফলে আবাসন খাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ এসকল জ্বালানীর উৎস নতুন আবাসন সন্ধানীদের উপর প্রভাব ফেলে। এই অবস্থার কি কোনো উন্নতি হবে? হয়তো।
পরিস্থিতি। আবাসন খাতে জ্বালানী সমস্যার মূলে রয়েছে নতুন বাসা-বাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া। এই ধারার শুরু ২০১১ সালের দিকে এবং তখন থেকে, যদিও ফ্ল্যাট এবং জমি বিক্রির পরিমাণ ২০০৯ সালের চেয়ে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে (আবাসন ব্যবসায়ীরা ২০১০ সালে ২০,০০০ অ্যাপার্টমেন্ট বেচাকেনা করেন), ক্রমাগত জ্বালানী সমস্যার মুখে ভবিষ্যৎ স্থাপনা ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে। বিডিডিএল প্রপার্টিজ লিমিটেডের এম এ বাতেন খানফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যদি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না করা হয় তবে স্থাপনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং তিনি বাংলাদেশের আবাসন খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
খানফের কথাগুলো কি ভবিষৎবাণীস্বরূপ? হয়তো তাই। ২০১৩ সাল নাগাদ, স্থাবর সম্পত্তি এবং ফ্ল্যাট বিক্রি প্রায় ৬০ ভাগ কমে যায়-কিন্তু তা শুধুমাত্র জ্বালানী সমস্যার কারণে নয়। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এর মোঃ সাইদুল ইসলাম বাদল মনে করেন ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণের আকাশচুম্বী সুদের হার বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এর নিন্মমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। বাদল ডেইলি স্টারকে বলেন বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রেতারা বুকিং দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এই নিন্মমুখী প্রবণতার এক ধরনের ডমিনো ইফেক্ট রয়েছে: ডেভেলপাররা তাদের চুক্তি থেকে সরে আসছেন যা নতুন প্রোজেক্টের প্রায় ৭৫ ভাগ। এক কথায়, বাড়ি ঘরের নির্মাণ থমকে দাঁড়িয়েছে।
পরস্থিতি কতটা ভয়াবহ? দেশের অন্যতম প্রধান আবাসন প্রতিষ্ঠান, শেলটেক (প্রাইভেট) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তৌফিক এম. সিরাজ স্বীকার করেন, আবাসন পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং আবাসন খাতের ভোক্তা সকলের জন্যই ২০১৩ সালটি সবচেয়ে খারাপ কেটেছে। সিরাজ সাহেব সাধারণত ৪০ টির মতো প্রকল্প দেখাশোনা করেন এবং প্রতি বছরই ১২ থেকে ১৫ টি নতুন প্রকল্প যুক্ত হয়, অথচ ২০১৩ সালে তাঁর মাত্র ৩ টি প্রকল্প যুক্ত হয়েছে। বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ ভাগ, যা অবিক্রিত অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যাকে ২২,৫৭২ এ এনে দাড় করিয়েছে। সিরাজ সাহেব একা নন। তাঁর সহকর্মীরাও একই ধরনের পরিসংখ্যান দিচ্ছেন এবং একই রকম বাস্তবতার শিকার।
সরকার কি এ ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে? আবাসন শিল্পের নেতা নাসরুল হামিদ আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে একটি জোট গঠন করেন। অংশগ্রহণকারীরা একটি প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রীর নিকট পেশ করতে সহায়তা করেন যাতে “অনতিবিলম্বে ৩,০০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড গঠন এবং সেখান থেকে নিন্ম ও মধ্যম আয়ের মানুষকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের কথা” প্রস্তাব করা হয়। ডেভেলপাররা, তাদের ব্যাংক ঋণ রি-শিডিউল করা ও এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডের জন্য আবেদন জানান, যেই সময়ের মধ্যে কোনো ডাউন পেমেন্ট দেওয়া লাগবে না। সরকার কি তাদের এই আবেদনে সাড়া দিয়েছিলো? হ্যাঁ এবং না। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠান। ৩,০০০ কোটি টাকার প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায়, এবং অন্যান্য প্রস্তাবগুলো মাঝপথে আঁটকে থাকে। ইদানীং সরকার “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” চালু করায় আবাসন ব্যবসায়ীদের কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমেছে যেটিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই অচলাবস্থার জন্য অন্যান্য বিষয়ও কি দায়ী? বাংলাদেশের আবাসন খাতের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, চিরাচরিত অতি নগরায়নের নমুনা, যার পেছনে দ্রুত বর্ধনশীল খাত, সীমিত জমিতে অনেক লোকালয় স্থাপন এবং বাজে নগর পরিকল্পনা ও নীতিমালা দায়ী। দুর্নীতি এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে সরকার তাঁর সংবিধানে দেওয়া প্রতিশ্রুতি (অণুচ্ছেদ ১৫(ক)) ভুলে গেছে, যেখানে বলা হয়েছে, জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন এবং আবাসনের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজে অংশগ্রহণ না করা বাংলাদেশ সরকারের মৌলিক দায়িত্ব।
কোনো আশা আছে কি? তলানিতে পড়ে থাকা আবাসন খাতকে তুলে এনে একবিংশ শতাব্দীর অগ্রগতির পথে পরিচালিত করতে নারী হতে পারে মূল হাতিয়ার। সেপ্টেম্বর ২০১২-এর ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি চ্যানেল (World Property Channel)-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধ অনুযায়ী, নারীরা শুধু আবাসন খাতের কেনাবেচার ধারাকেই পরিচালনা করছে না বরং তাঁরা মালিকানার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসছে। দ্যা ইকনোমিস্ট উল্লেখ করেছে যে, আমাদের আবাসন খাতে মহিলাদের অবদান ভারতের নারীদের চেয়ে বেশি, এবং যদিও জমির মালিকানা মূলত পুরুষের কাছেই রয়েছে, তবে নারীরাও উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি পুরুষদের হাতে তুলে না দিয়ে তাতে নিজেদের দাবী প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে, যার ফলে আবাসন খাতের ক্ষমতার ভারসাম্য নারীদের দিকে ঝুকে পরতে পারে, যেহেতু তাঁরা সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে আরও বেশি সোচ্চার।
এক সময় এই অচলাবস্থা কেটে যাবে। ২০১৩ সালে ডেইলি ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের এক প্রবন্ধে বলা হয়, আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০,০০০ থেকে ২২,০০০ ফ্ল্যাট লীজ দেওয়া সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র শক্তি বা এনার্জি কারণে। আরও ৮,০০০ ফ্ল্যাটের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদের হার কমানো এবং সোলার প্যানেল এবং প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বৃদ্ধি পেলে, এই বাজার ঠিক হতে পারে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা করা উচিৎ, বিশেষ করে ঢাকা ও রাজশাহীতে, যেখানে আবাসন সমস্যা প্রকট।
বাজারের কেন্দ্রীকরণ। গ্যাস ও বিদ্যুতের সুবিধার সাথে আবাসন খাতের বিভিন্ন চাপ নিয়ে বোদ্ধারা অনেক লম্বা বক্তৃতা দিতে পারবেন, কিন্তু একটা ব্যাপার স্পষ্ট: বাংলাদেশের আবাসন খাতের পুনরুদ্ধার ততটাই জোরালো হবে যতটা জোরালো হবে এর জঞ্জাল পরিষ্কারের প্রচেষ্টা। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী জমি, বাড়িভাড়া, এবং বাড়ি কিনতে মধ্যস্ততাকারীদের অণুঘটক হিসেবে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বিক্রয় ডট কমের মতো পরিষেবা এই প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা একটি কেন্দ্র তৈরি করেছে যেখান থেকে খোঁজ করা শুরু হতে পারে। চাকরি, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনকারী নারী ও পুরুষ তাঁদের বাড়ি খুঁজতে সাহায্য চান এবং বিক্রয় ডট কমে তাঁদের অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন রিসোর্সের তথ্য পাবেন এবং ক্রেতাদের ভৌগলিক অবস্থান ও দাম অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। bikroy.com কোনো মধ্যসত্ত্বভোগীর ঝামেলা ছাড়াই তার ক্রেতা বিক্রেতাদের মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং বিজ্ঞাপন দেওয়া বা বিজ্ঞাপন দেখতে কোনো চার্জ নেওয়া হয় না। এটিই কি বাংলাদেশের আবাসন খাতের ভবিষ্যৎ? এই মুহূর্তে, মিথ্যা আশ্বাসের চাইতে, যাদের আবাসনের বেশি প্রয়োজন তাঁদের চাহিদা পূরণের এটাই কার্যকর উপায়।
Source: https://bnblog.bikroy.com
1 Comments
Remaining the Capital Metropolis, Dhaka is one of the busiest metropolitan areas of Bangladesh. As outlined by stats, Dhaka’s total population is a lot more than two Crore in 2021. Much more than 70% of people have come from outside of Dhaka to generate their livings. All those important numbers of people decide to rent properties to reside in Dhaka. Would you belong to those individuals? In search of Home Rent in Dhaka? This information can help you to make a greater selection for renting a home in Dhaka. Besides, you will know about ways to get dwelling hire in Dhaka. With no more delay, let’s make a dive ahead.
ReplyDeleteVery first thing very first, You must settle on a specific location where by you desire to to stay in Dhaka. Nobody likes a loud spot. Before you decide to hire a flat in Dhaka, you'll want to Check out the spot just how much noisy can it be? Then, you have to know about the availability of Fuel and Drinking water in that area. Are you aware of that some places in Dhaka don’t have correct Fuel and Water availability? Before transferring on, you ought to inspect the Fuel and Drinking water availability. Besides, it is crucial to get marketplaces nearby. If not, it might Provide you an uncomfortable experience quicker or afterwards.Safety is an additional big situation. Inspect the safety program right before renting a flat in Dhaka metropolis. It will be a bonus If your property is surveillance with CCTV cameras. Previous although not the the very least, price range is a vital factor to contemplate after you are trying to find lease in Dhaka. Talk with the assets owner in regards to the Progress You should spend. Also, request the proprietor about if any more fees you have to bear. If every little thing goes wonderful, you could hire flat in Dhaka. Now, I would want to advise you ways to get Home Hire in Dhaka.