- ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আউয়াল
****************************
অন্ন এবং বস্ত্রের পরেই বাসস্থান হচ্ছে যে কোন মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম উপাদান। যে কোন রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্বই হলো রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। যতক্ষণ পর্যন্ত এই তিনটি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করাই অর্থহীন।কারণ কারও পেটে ভাত না থাকলে সে চুরি, ডাকাতি এমনকি খুন-খারাপী করতেও এতটুকু দ্বিধাবোধ করবে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪০ বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আমাদের রাষ্ট্র সাধারণ জনগণের মৌলিক চাহিদার অন্যতম বাসস্থান পূরণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
যে কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে বসবাসরত
মানুষের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ এখনও বস্তি বা বস্তি সমতুল্য ঘরে বসবাস
করছে। তাছাড়া গ্রামেও প্রতিটি বাড়িতে গায়ে গা লাগিয়ে তৈরি করা, প্রয়োজনের
তুলনায় অনেক ছোট একটি ঘরে পুরো একটি পরিবার বাস করছে।
অন্যদিকে চাকুরীজীবি তথা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তাদের নিজের বাসস্থান নিজেরাই ব্যবস্থা করছে এবং
তা করতে গিয়ে অনেকে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ আমরা সকলেই
জানি শুধুমাত্র বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যয় মেটানোর পর,
এই উচ্চমূল্যের বাজারে অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করাটাই যথেষ্ট কঠিন,
সেখানে বাসস্থানের স্বপ্ন দেখাটাও সম্ভবতঃ অন্যায়।
আরেক শ্রেণীর মানুষ যারা কোন না কোনভাবে
এক খণ্ড জমির মালিক হয়েছেন তারা এই জমির ওপর কয়েক তলা বাড়ি বানিয়ে যে হারে
ভাড়া তুলছেন তাতে অনেকেরই বেতনের টাকার পুরোটাই এই খাতে চলে যাচ্ছে। আরেক
শ্রেণী যাদেরকে আমরা উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের মানুষ বলে জানি তারা যে
দাম দিয়ে প্রাইভেট ডেভেলপারদের কাছ থেকে বিশেষ বিশেষ এলাকায় ফ্যাট কিনছেন
এতো টাকা তারা কোথা থেকে কীভাবে জোগাড় করছেন তা কেবলমাত্র তারাই বলতে
পারবেন। দুঃখজনক হচ্ছে এসব প্রশ্ন করার জন্য এদেশে কেউ আছে বলে মনে হয় না।
কারণ- কে কাকে প্রশ্ন করবেন?
এতো গেল সমস্যার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে এর
সমাধান কোথায় এবং কীভাবে? এর উত্তরে প্রথমেই বলতে হয় ধনী, গরীব নির্বিশেষে
দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব প্রথমত রাষ্ট্রকেই নিতে
হবে। প্রতিটি মানুষই যেন কিছু না কিছু করে খেতে ও পরতে পারে তার একটা
ক্ষেত্র রাষ্ট্রকেই তৈরি করতে হবে।
কাউকে সরাসরি চাকুরী দেওয়াটা রাষ্ট্রের
কোনো কাজ নয়। রাষ্ট্রের কাজ হলো দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি
স্বচ্ছ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। আর তা হলেই প্রচুর চাকুরীর
ব্যবস্থা এমনিতেই হবে। তখন সরকারকে আর ঘরে ঘরে চাকুরী দেওয়ার কথা খুব একটা
ভাবতে হবে না। এর উদাহরণ পার্শ্ববর্তী দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও
মালয়েশিয়ায় আছে। এসব দেশে কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমরা ইচ্ছা করলে খুব সহজেই
জানতে পারি।
আজকের এই স্বল্প সময়ে বিস্তারিত আলোচনা
করার সুযোগ নাই বিধায় আমি অতি সংক্ষেপে সিঙ্গাপুরের উদাহরণটাই একটু তুলে
ধরতে চাই। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য Singapore সরকার ১৯৬১ সালে দুটি
Board গঠন করেন। দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে তাদের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা
নিজেরাই করতে পারে তার জন্য প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষের জন্য চাকুরী সৃষ্টির
লক্ষ্যে বিদেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া শেখা অপেক্ষাকৃত তরুণ ও
মেধা সম্পন্ন অফিসারদের নিয়ে একটি Economic Development Board সংক্ষেপে EDB
গঠন করেন। EDB’র কাজ ছিল একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে মূলত
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। EDB প্রথমেই সরকারের প্রত্যক্ষ
সহায়তায় শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় অবকাঠামো তৈরি করার
পাশাপাশি একটি One Stop Cell গঠন করে যাতে কোন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন দপ্তরে,
মন্ত্রণালয়ে ঘুরাঘুরি করতে না হয়।
এ One Stop Cell এর কাজ ছিল যেকোন
উদ্যোক্তাকে জমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদিসহ প্রয়োজনীয়
সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা। তাছাড়া EDB’র তরুণ অফিসারগণ এমনকি তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী Lee Kuan Yew স্বয়ং নিজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহুজাতিক
কোম্পানীর অফিস পরিদর্শন করে দাওয়াত দিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে একটা জিনিস তিনি
খুব সচেতনতার সাথে পরিহার করেছেন, তা হলো কারও কাছে ভিক্ষার হাত বাড়াননি।
কারণ তিনি তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলেন যে,
ভিক্ষা করে একটি জাতি কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। যে কারণে তার
Approach-ই ছিল ‘No Begging Bowl’ Approach যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল।
ফলে বহু বিদেশী উদ্যোক্তা যারা সিঙ্গাপুর
রাষ্ট্রটি পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত তাও জানত না তারাও সিঙ্গাপুরে এসে যাবতীয়
ব্যবস্থাদী দেখে-শুনে একের পর এক শিল্প কারখানা স্থাপন করে। ফলে মাত্র দশ
বৎসর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মাধ্যে বেকার সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। ভিক্ষা করে যে
একটি জাতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, অনেক দেরীতে হলেও আমরা সম্ভবতঃ তা
উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তি ভাষণে মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তারই প্রতিফলন সমগ্র জাতি দেখতে পেয়েছে।
Economic Development Board এর পাশাপাশি
Singapore Government প্রতিটি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে
Housing Development Board সংক্ষেপে HDB নামে আরেকটি বোর্ড গঠন করেছিলেন।
এই দায়িত্বটিও HDB যথেষ্ট দক্ষতার সাথেই পালন করতে পেরেছে। আর তা করতে গিয়ে
তারা এক সময় প্রতি ৩৬ মিনিটে একটি করে ফ্যাট তৈরি করেছে।
ফলে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে
শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা তারা করতে সক্ষম হয়। এমনকি ২০০৫
সালে চাহিদার অতিরিক্ত প্রায় দশ হাজার ফ্যাট অবিক্রিত অবস্থায় ছিল।
প্রথমদিকে তারা তখনকার অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে শুধুমাত্র এক রুম,
দুই রুম বা সর্বোচ্চ তিন রুমের ফ্যাট তৈরি করে। পরবর্তীতে দেশের সার্বিক
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সংগতি রেখে চার রুম ও
পাঁচ রুম বিশিষ্ট ফ্যাট তৈরি করে।
২০০৫ সালের পর Private Developer-দের সাথে
পাল্লা দিয়ে তারা প্রায় পাঁচ তারকা হোটেলের মান বিশিষ্ট Condominium
Apartment তৈরি করা শুরু করে। এ সব কোন তত্ত্ব কথা নয়। আমরা যারা
সিঙ্গাপুরে একাধিকবার গিয়েছি তাদের অনেকেরই এসব ফ্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট
নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
এতো গেল সিঙ্গাপুরের কথা। এক্ষেত্রে
আমাদের করণীয় কী? অনেকেই বলেন সিঙ্গাপুর একটি ছোট দেশ আর তার জনসংখ্যাই বা
কত। একটি তথ্য আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই। সিঙ্গাপুরের আয়তন বর্তমানে
৭০০ বর্গ কিলোমিটার। আর জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ।
তাহলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার
ঘনত্ব দাড়ায় ৮,৫০০ এরও বেশী। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা যদি আমরা ১৫ কোটি ধরে
নেই তাহলে ৫৫,০০০ বর্গমাইল তথা ১,৪৪,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার দিয়ে ভাগ করলে
ঘনত্ব দাঁড়ায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ১,০৩৭ জন প্রায়। তাহলে দাড়ালোটা
কী?
এ ব্যাপারে আমার একটি Idea আপনাদের সাথে
Share করতে চাই। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ৬৪টি জেলাকে এক একটি
ইউনিট হিসাবে চিন্তা করে স্থানীয় সরকারকে যথেষ্ট ক্ষমতায়নের মাধ্যমে যার
যার জেলার উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যদি ৬৪টি সিঙ্গাপুর তৈরি করতে পারি
এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করে Inter connect করতে পারি তাহলে
কেমন হয়, একটু ভেবে দেখব কী? জানি না কে কি ভাবছেন, কিন্তু আমি মনে করি
চাইলে সবই সম্ভব, প্রয়োজন শুধু একটুখানি সদিচ্ছা, যথাযথ উদ্যোগ ও সঠিক
পরিকল্পনা।
তবে সবকিছুর আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে
সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি Nationwide Land Use Plan তৈরি করা। ১৫ কোটি
(যা এক সময় ২০ বা ২৫ কোটি হতে পারে) মানুষের খাদ্য চাহিদা মাথায় রেখে
কতটুকু জমিতে আমরা ধান চাষ করব তা যথাযথভাবে চিহ্নিত করে এসব জমিকে শুধু
ধান চাষের জন্য সংরক্ষিত (Reserved) রাখতে হবে। বাকী জমিতে কোথায় শিল্প
কারখানা আর কোথায় এবং কতটুকু জায়গায় আবাসন তৈরি করব তা নির্ধারণ করতে হবে।
আবাসনের জন্য নির্ধারিত জমির যথাযথ
ব্যবহার আমরা কিভাবে করব তার যথাযথ পরিকল্পনাও আমাদেরকেই করতে হবে। তেজগাঁও
বিমানবন্দর কেন, প্রয়োজন হলে হযরত শাহজালাল (রঃ) বিমানবন্দরও অন্যত্র
সরিয়ে নিতে হবে। ঠুনকো অজুহাত দিয়ে একটি স্বাধীন দেশের রাজধানীকে বনসাই
মার্কা শহর বানিয়ে রাখা যাবে না। প্রতিটি শহরকেই যথাযথ পরিকল্পনার আওতায়
এনে বসবাসরত জনগনের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য দেশের
ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর ন্যায় ৪০ বা ৫০ তলা আবাসিক ভবন তৈরি করতে হবে।
এতো গেল শহরের কথা। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান
শহরমুখী জনস্রোত ঠেকাতে না পারলে কোন শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনাই কোন কাজে
আসবে না। আর এই শহরমুখী জনস্রোতকে ঠেকাতে হলে আমাদের গ্রামের উন্নয়নের দিকে
যথাযথভাবে নজর দিতে হবে। সম্ভবত ২০০৬ সালে বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্পের
আওতায় “Making Dhaka City Liveable” শিরোনামে শেরাটন হোটেলে একটি গোল টেবিল
আলোচনা হয়েছিল, যেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম।
গোল টেবিল আলোচনায় অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ
ঢাকা শহরকে কিভাবে বসবাসযোগ্য করা যায় এ বিষয়ে অনেক জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য
রেখেছিলেন, যা আমি গভীর মনযোগের সাথে শুনেছিলাম। আলোচনার শেষ পর্যায়ে আমি
হাত তুলে মাত্র দু’মিনিটের মধ্যে আমার বক্তব্য পেশের অনুমতি নিয়ে অতি
সংক্ষেপে বলেছিলাম-“ঢাকা শহর কেন বাংলাদেশের কোন শহরকেই বসবাসযোগ্য করা
যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে বসবাসযোগ্য করতে
না পারব। আর তা করার জন্য Lee Kuan Yew না হউক অন্তত ড. মাহাথির এর মত একজন
Visionary Leader আমাদের একান্ত দরকার। জানি না আমার এই বক্তব্যটি সেদিন
কে কিভাবে নিয়েছিলেন। তবে আজও আমি একই কথা বলব। যাই হোক এবার আমাদের করণীয়
কি এ প্রসঙ্গে আসা যাক।
আমরা অনেকেই জানি বর্তমানে গ্রামে-গঞ্জে
যেভাবে যত্রতত্র বাড়ি-ঘর এবং শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে তাতে প্রতি বৎসর শতকরা
এক ভাগ হারে আমাদের আবাদি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। ২০০৭ সালে একটি পত্রিকায়
প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তথ্য ছিল- “প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর আবাদি জমি হারিয়ে
যাচ্ছে, ২৫ বৎসরে হারিয়েছে ৬০ লক্ষ একর।”
২০০৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত-
“হুমকির মুখে আবাদযোগ্য জমি” শীর্ষক একটি সেমিনারেও এই রকম একটি তথ্য তুলে
ধরা হয়েছিল। প্রথমেই আমাদের এভাবে যত্রতত্র বাড়ি-ঘর, শিল্প-কারখানা তৈরি
বন্ধ করতে হবে। তারপর Nationwide একটি Land Use পলিসি নির্ধারণ করতে হবে,
যা একটু আগেও বলেছি। ২০১০ সালের শেষের দিকে DAP নিয়ে আলোচনায় বলেছিলাম
মাত্র ৫৯০ বর্গমিটার জুড়ে শুধুমাত্র ঢাকা শহরের জন্য DAP কেন, সমগ্র
বাংলাদেশের জন্য ৫৫০০০ বর্গমাইল জুড়েইতো DAP তৈরি করা দরকার।
যাই হোক আবারো আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে
আসা যাক। আমরা অনেকেই Compact Township এর কথা শুনেছি। সেই আলোকে আমার
প্রস্তাব হচ্ছে-বাংলাদেশে প্রায় ৪৫০০ ইউনিয়ন আছে; প্রতিটি ইউনিয়নে এ ধরনের
একটি Compact Township গড়ে তোলা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের অন্তর্গত সব গ্রামের
সকল মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে এসে এসব শহরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। শুধু
বাসস্থান নয় কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদিসহ সুস্থভাবে বেচে
থাকার জন্য যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থা এই টাউনেই থাকবে। আর যদি আমরা তা করতে
পারি তাহলে চাষাবাদের জন্য অনেক জমিও আমরা উদ্ধার করতে পারব। আর এ বিশাল
কাজটি করতে হলে আমাদের প্রথমেই দীর্ঘ মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
এ জন্য দেশী/বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি
Panel of Experts গঠন করে তাদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে
একটি কথা না বলেই পারছি না। বিশেষজ্ঞ বলতে আমি মনে করি যাদের এ ধরনের কাজ
করার বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে শুধু তাদেরকেই এই Panel-এ রাখা যেতে পারে। এ
বিশাল কর্মযজ্ঞটি বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ সমূহকে
যথাযথ ক্ষমতায়নের পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে
পারে। আর এ কাজটি করার জন্য জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দও
রাখতে হবে। শতকরা ১ (এক) ভাগ বা তার চাইতে কম বাজেট বরাদ্দ দিয়ে সবার জন্য
আবাসন এর ব্যবস্থা করা ২০২১ সালের মধ্যেতো নয়ই আগামী একশত বৎসরেও সম্ভব নয়।
আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আশা করি
এদেশের মাটি থেকে গড়ে ওঠা প্রাইভেট ডেভেলপারগণই যথেষ্ট, বাহিরের কোন
কোম্পানী বা গোষ্ঠির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
আর একটি কথা যা না বললেই নয়- আমরা রিহ্যাব
থেকে বহু আগে থেকেই বলে আসছিলাম সরকার যদি তার বেদখল হয়ে যাওয়া খাস জমি
সমূহ উদ্ধার করে অথবা যেকোন জমি ন্যায্য মূল্যে অধিগ্রহণ করে একটি
নীতিমালার আওতায় আমাদের দেশী ডেভেলপার কোম্পানী গুলিকে দিয়ে দেয় তাহলে
আবাসন সমস্যার সমাধান খুব কঠিন কিছু নয়।
এ ব্যাপারে আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব
হচ্ছে-বর্গফুট প্রতি সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য বেধে দিয়ে সরকার ডেভেলপারদের
কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করতে পারে। সেই সব প্রস্তাবসমূহ স্বচ্ছ
প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারে।
তদনুযায়ী প্রাপ্ত ফ্যাটসমূহ সরকার ২৫/৩০ বৎসর মেয়াদে পরিশোধের ব্যবস্থা
রেখে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বরাদ্দ দিতে পারে।
এতে করে দুটি লাভ হতে পারে।
অ্যাপার্টমেন্টের দাম যেভাবে বেড়ে চলছে সরকার তার লাগাম টেনে ধরতে পারে।
তাছাড়া দুর্নীতির মাত্রাও কিছু অংশে হলেও কমতে পারে।
[লেখক : পুরকৌশলী, সাবেক সভাপতি, রিহ্যাব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।]
0 Comments